শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪
Online Edition

মার্কিন গণমাধ্যমের শিরোনামে ইরানে ইসরাইলী হামলার খবর

সংগ্রাম ডেস্ক : মার্কিন মিডিয়ায় ইরানে ইসরাইলের হামলার খবর। তারা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের উপর নাকি প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া সে খবর নিশ্চিত করে জানিয়েছে শুক্রবার মধ্য প্রদেশের ইসফাহানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইসফাহান শহরের কাছে বিস্ফোরণের শব্দ শোনার পর ইরানের বেশ কয়েকটি শহরে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম। সপ্তাহান্তে ইরান ইসরাইলে শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করার পর ইসরাইল আগেই সতর্ক করেছিল যে, তারা পাল্টা আঘাত করবে। ইরানের ফারস বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, ইসফাহান প্রদেশের উত্তর-পশ্চিমে শেখারি সেনা বিমান ঘাঁটির কাছে তিনটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইরানের মহাকাশ সংস্থার মুখপাত্র হোসেইন দালিরিয়ান বলেছেন, ‘বেশ কিছু’ ড্রোন সফলভাবে ভূপাতিত করা হয়েছে। খালিজ টাইমস/ বিবিসি।

দালিরিয়ান সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ বলেছেন, 'আপাতত কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর নেই'।

ইরানের তাসনিম নিউজ এজেন্সি ‘নির্ভরযোগ্য সূত্রের’ বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনা সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে বলে জানা গেছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এবিসি এবং সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, ইসরাইল হামলা চালিয়েছে। হোয়াইট হাউস বা পেন্টাগন থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, ইসরাইলী হামলার লক্ষ্যবস্তু পারমাণবিক স্থাপনা নয়। ইসরাইলী সামরিক বাহিনী এএফপিকে তাৎক্ষণিক কোনো  মন্তব্য করতে চায়নি।

সপ্তাহান্তে, আঞ্চলিক শত্রু ইসরাইলকে সরাসরি লক্ষ্যবস্তু করতে ইরান প্রথম হামলা চালায়। ইরানের উৎক্ষেপণ করা ৩০০টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনের বেশিরভাগই ভূপাতিত করে ইসরাইল এবং কোনও  মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। দামেস্কে তার কনস্যুলেটে ১ এপ্রিলের একটি স্ট্রাইকের প্রতিশোধ হিসাবে ইসরাইলকে দায়ী করে হামলা চালায় ইরান। ইরান ফিলিস্তিনী প্রতিরোধ যোদ্ধা সংগঠন হামাস এবং লেবাননের হিজবুল্লাহর প্রধান সমর্থক। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, যিনি ৭ অক্টোবরের হামলার পর  গাজায় পাল্টা আক্রমণ শুরু করে হামাসকে ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি  ইরানের বিরুদ্ধে  নিজের দেশকে  রক্ষা করার আশ্বাস দিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইলের প্রধান মিত্র এবং সামরিক সরবরাহকারী, স্পষ্ট করেছে যে তারা ইরানের উপর প্রতিশোধমূলক আক্রমণে যোগ দেবে না, তবে ইরানের আক্রমণে ব্যবহৃত ড্রোন তৈরির সাথে জড়িত ব্যক্তি এবং সংস্থার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবার বলেছিলেন,'ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের ড্রোন প্রোগ্রামকে অনুমোদন দেবার পর আমরা ইরানকে দায়বদ্ধ করছি।' ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন- ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের উপর যে কোনও আক্রমণ হলে ইসরাইলকে তার ফল ভোগ করতে হবে।

শুক্রবার ইরানের বিভিন্ন অংশে ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে। তেহরানের সরকারী বার্তা সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, ‘দেশের বিভিন্ন অংশের আকাশে ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে।’ মেহর বার্তা সংস্থা জানিয়েছে যে, ‘তেহরান, ইসফাহান এবং শিরাজের ফ্লাইট এবং পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমের বিমানবন্দরগুলীর কার্যক্রম  স্থগিত করেছে।’ দুবাইয়ের এমিরেটস এয়ারলাইন থেকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। 

 

জাতিসংঘের সতর্কবার্তা : গত বৃহস্পতিবার, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।  সতর্ক করেছেন যে গাজায় যুদ্ধ এবং ইসরাইলের উপর ইরানের হামলা নিয়ে পূর্ণ মাত্রার আঞ্চলিক সংঘাতে পরিণত হতে পারে। নিরাপত্তা পরিষদে গুতেরেস বলেছেন, 'মধ্যপ্রাচ্য একটি ক্রান্তিলগ্নে রয়েছে। সামনের  দিনগুলো বিপজ্জনক। একটি ভুল পদক্ষেপ পূর্ণ মাত্রার আঞ্চলিক সংঘাতের রূপ নিতে পারে যা সকলের জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে  পারে।  এমন অবস্থায় উভয় পক্ষকেই সংযম বজায় রাখতে হবে।'

কোনো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরান : ইসরাইলী ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা সরাসরি অস্বীকার করেছেন ইরানের জাতীয় সাইবারস্পেস কেন্দ্রের মুখপাত্র হোসেইন দালিরিয়ান। এক এক্স পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘ইসফাহান কিংবা দেশের অন্য কোনো স্থানে সীমান্ত পেরিয়ে আশা কোনো আকাশ হামলার ঘটনা ঘটেনি।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘তারা কোয়াডকপ্টার (ড্রোন) ওড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলো। এই ড্রোনগুলোকে ভূপাতিত করা হয়েছে।’ 

এদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম আইরআইবি জানিয়েছে, ইসফাহান শহর নিরাপদ ও শান্ত রয়েছে। সেখানকার মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। 

ইরানে হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পায়নি ইসরাইল : ইরানের ভূখ-ে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে আগাম তথ্য পেলেও যুক্তরাষ্ট্র তাতে সমর্থন জানায়নি। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন এমন সূত্র ও এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে এনবিসি ও সিএনএন।

সিএনএন এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা হামলার লক্ষ্য ছিল না। ইসরাইল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রকে জানায়, তারা আগামী দিনগুলোতে ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা চালাবে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জ্যেষ্ঠ্য মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, ‘আমরা এই হামলার সমর্থন দেইনি।’ 

ইসরাইলের এই হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে হোয়াইট হাউস কোনো মন্তব্য করেনি। এএফপি এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেন্টাগনের ডিউটি ডেস্ক থেকে জানানো হয়, ‘আপাতত আমাদের এ বিষয়ে কিছু জানানোর নেই।’

অবিলম্বে প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা নেই ইরানের : ইসরায়েলের হামলার খবর প্রকাশ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ইরানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবিলম্বে প্রতিশোধ নেয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। দুই মার্কিন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেছেন, ইরানের ওপর এই হামলা ইসরায়েলের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। যদিও ইসরায়েল এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ইরানি কর্মকর্তা বলেন, এই ঘটনাটি যে বিদেশি কোনো উৎস থেকে হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আমরা বাইরে থেকে কোনো আক্রমণের সম্মুখীন হইনি এবং চলমান আলোচনা হামলার চেয়ে অনুপ্রবেশের দিকেই বেশি ঝুঁকছে।

এদিকে মাত্র এক ঘণ্টা আগে একজন ইরানি বিশ্লেষক দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভিকে বলেন, ইসফাহানে বিমান প্রতিরক্ষা দিয়ে যে মিনি ড্রোনগুলোকে গুলী করা হয়েছিল সেগুলো ইরানের ভেতর থেকেই ওড়ানো হয়েছে। অপরদিকে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, ইরানের পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র বা স্থাপনাগুলোতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

জাতিসংঘের এই সংস্থাটির মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসি শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে জোর দিয়ে বলেছেন যে, পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সামরিক সংঘাতের লক্ষ্য হওয়া উচিত নয় এবং তিনি সবাইকে সর্বোচ্চ ধৈর্য্য ধারণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম নিউজের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘সম্পূর্ণ নিরাপদ’। ইসরায়েলে হামলার ঘটনাকে বেশ ছোট করেই দেখাতে চাইছে ইরান। যেন এর বিশেষ তাৎপর্য নেই। তারা বলছে, কোনো হামলা হয়নি। ক্ষুদ্রাকৃতি ড্রোনের রম্য ছবি প্রচার করছে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, ওই অঞ্চলের ভালোর জন্য ইরান এবং ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের ইতি টানা উচিত। এই পাল্টাপাল্টি আক্রমণের শুরুটা হয় দামেস্কে ইরানি কূটনৈতিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলার মধ্য দিয়ে। ইরানের ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর সাইবারস্পেস’-এর পক্ষ থেকে ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করা হয়েছে।

সামাজিক মাধ্যম এক্সে সংস্থাটির মুখপাত্র হোসেইন দালিরিয়ান বলেছেন, ইসফাহান বা দেশের অন্য কোনো জায়গায় সীমান্তের বাইরে থেকে কোনো হামলা হয়নি। তিনি বলেন, ইসরায়েল কোয়াডকপ্টার (ড্রোন) পাঠানোর ব্যর্থ ও বিব্রতকর একটি প্রয়াস চালিয়েছে এবং সেসব ড্রোন গুলী করে ভূপাতিত করা হয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ